পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত ১২.৫-কিলোমিটার-long (৭.৮ মা) বিশিষ্ট একটি আট লেন-প্রশস্ত এভিনিউ এক্সপ্রেসওয়ে।[১] এই এক্সপ্রেসওয়ে পূর্বাচলকে ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে।
১৩-কিলোমিটার (৮.১ মা) খাল, ১৩-কিলোমিটার (৮.১ মা) রাস্তা, ৩৯-কিলোমিটার (৩৯ কিমি) ওয়াকওয়ে, চারটি আইলুপ, খালের উপর 13টি সেতু, চারটি এক্সপ্রেসওয়ে ফুট ওভার ব্রিজ এবং পাঁচটি স্লুইস গেট নির্মাণাধীন। একটি পাম্প হাউস ছাড়াও, ১২টি ওয়াটার বাস স্টপ এবং একটি ৪.৮-কিলোমিটার (৩.০ মা) স্টর্ম স্যুয়ার লাইন নির্মাণ করা হবে।
গাজীপুর-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ
সম্পাদনা
ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে নামে একটি নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলাকে সংযুক্ত করবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানীর প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্ত করেছে এই সড়কটি।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটি ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কটি ১৪ লেন বিশিষ্ট। এর মধ্যে ৮ লেন সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ৬ লেন সড়ক স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড।
বালু নদী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ১২ লেনের। এর মধ্যে ৬ লেন সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ৬ লেন সার্ভিস রোড। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়। এখন চলছে সড়ক ও খালের পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ। সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজউক। জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খাল খনন ও সংস্কার করা হচ্ছে।
অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে একটি গাড়ি ৬ থেকে ৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে হাতিরঝিলের চেয়েও আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন। এটা শুধু ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য যোগাযোগের জন্য নয়, এতে থাকছে সৌন্দর্যের ফোয়ারা ও বিনোদনের মনোমুগ্ধকর সব নিদর্শন। কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত মূল রাস্তাটি হবে আট লেনের। দুই পাশে ১০০ ফুট করে দুটি খাল। দুটি খালেরই দুই পাশে থাকছে সার্ভিস রোড। সার্ভিস রোডেও থাকবে একাধিক লেন। তার বাইরেও থাকছে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য গেটওয়ে।
খাল পারাপারে দৃষ্টিনন্দন পদচারী ব্রিজগুলো মূলত পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। ব্রিজে উঠে তারা উপভোগ করতে পারবেন গোটা প্রকল্পের সৌন্দর্য। দুই পাশের খালে চলবে ওয়াটার বাস, যা মূলত পর্যটকদের জন্যই চালু করা হবে। খালের দুই পাশে তৈরি করা হবে সবুজ ওয়াকওয়ে। এক সঙ্গে ৪০ হাজারের বেশি পর্যটক উপভোগ করতে পারবেন প্রকল্পের সৌন্দর্য।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাটির তলদেশ থেকে আকাশ পর্যন্ত সর্বত্র চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌ-পথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ উন্নত দেশগুলোর মতো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কে আসছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মানুষও মেট্রোরেলে চড়ছে। ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের যাতায়াত সহজ করতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দ্রুত গতির বাস চলাচলের জন্য রাপিড বা বিআরটি রুট নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে ট্যানেল। নদীর তলদেশে এটাই দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ।
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে সমুদ্রছোঁয়া বিশ্বমানের বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। সিঙ্গাপুর-ব্যাংককের আদলে সাজানো হচ্ছে কক্সবাজারকে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী এবং পটুয়াখালীর পায়রাতে চলছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে নতুন কনটেইনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড, বে-টার্মিনাল, বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নাব্যতা দূর করে নৌ-পথ উন্নয়নের কার্যক্রম চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন এক মাইলফলকে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এতে করে বাড়ছে কর্মসংস্থান, বিকাশ ঘটছে পর্যটন শিল্পের। বদলে গেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি।